ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের বার্ষিক সমাবেশ বা
ইজতেমাকে গরীবেরর হজ্ব ও হজ্বের সাওয়াবের
সাথে তুলনা করা নিতান্তই অজ্ঞতাসূচক,
বিভ্রান্তিমূলক ও কুফরীর শামিল | যে ব্যক্তি এরূপ
আক্বীদা পোষণ করবে এবং এ আক্বীদা পোষণ করা
অবস্থায় মারা যাবে, সে ঈমান হারা হয়ে চির
জাহান্নামী হবে | কারণ হজ্ব হলো ইসলামের পাঁচটি
স্তম্ভ বা ভিত্তির মধ্যে একটি বিশেষ ভিত্তি |
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূল পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম
পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) স্বাক্ষ্য দেয়া
আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ও হযরত মুহম্মদ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বান্দা ও
রসল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪)
হজ্ব করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা
|” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হজ্ব ইসলামের একটি
বিশেষ ভিত্তি | শুধু তাই নয়, হজ্বকে “জামিউল
ইবাদত” ও বলা হয় | এ হজ্ব মালেকে নেছাবদের জন্যে
জীবনে একবার আদায় করা ফরযে আইন | যে ব্যক্তি
হজ্ব ফরয হওয়া সত্বেও বিনা শরয়ী ওজরে হজ্ব করা
থেকে বিরত থাকে, হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মোতাবেক সে ইহুদী-নাছারা অর্থাৎ বেদ্বীন হয়ে
মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে |
কাজেই যেখানে হজ্ব একটি ফরয ইবাদত, অশেষ
ফযীলত লাভের মাধ্যম ও ইসলামের একটি গুরুত্ব ও
তাৎপর্যপূর্ণ আমল, সেখানে একটি বাৎসরিক সমাবেশ
বা ইজতেমাকে কি করে হজ্বের সাথে তুলনা করা
যেতে পারে? যেখানে শরীক হওয়া ফরয, ওয়াজিব,
সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ্, সুন্নতে যায়েদাহ্, মুস্তাহাব, নফল
কোনটাই নয় | মূলতঃ হজ্বের সাথে ইজতেমাকে তুলনা
করা বা ইজতেমাকে গরীবের হজ্ব বলা, ইসলামের
ভিতর প্রকাশ্য তাফরীত ও ইফরাতের অর্থাৎ কমানো,
বাড়ানোর শামিল, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট
কুফরী | যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায় ও ৭২টি বাতিল
ফেরকার লোকরা ইসলামের ভিতর তাফরীত ও ইফরাত
অর্থাৎ কমানো, বাড়ানোর কারণে কুফরীতে নিপতিত
হয়ে কাফের বা অমুসলিম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে |
এখানে উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফে এমন অনেক
আমলের কথাই বলা হয়েছে, যা পালন করলে হজ্ব ও
ওমরার সওয়াব পাওয়া যায় | যেমন-
“ফযর নামাযের পর যিকির-আযকার করে এশরাক্ব
নামায আদায় করলে এক হজ্ব ও ওমরার সওয়াব পাওয়া
যায় |” (মালা-বুদ্দা মিনহু)
অনুরূপ পিতা-মাতার চেহারার দিকে নেক দৃষ্টিতে
তাকালেও হজ্বের সাওয়াব পাওয়া যায় | এ প্রসঙ্গে
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, “সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন নেক সন্তান যখন
পিতা-মাতার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেয়, তখন আল্লাহ্
পাক তার প্রত্যেক দৃষ্টির বিণিময়ে একটি করে কবুল
হজ্বের সওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেন |” হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
বললেন, যদি প্রতিদিন একশতবার দৃষ্টি দেয়, তবে?
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আল্লাহ্ পাক মহান ও পবিত্র | (আল্লাহ্ পাক একশতটি
হজ্বের সওয়াবও দিতে পারেন) |” (শো’বুল ঈমান,
মেশকাত, মেরকাত)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, যে সকল আমল করলে হজ্ব
বা ওমরার ফযীলত পাওয়া যায়, তা হাদীছ শরীফে
স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে | কিন্তু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্
শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও উল্লেখ নেই যে,
টঙ্গীর ইজতেমা গরীবের হজ্ব বা ইজতেমায় গেলে
হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায় |
মূলতঃ এরূপ বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ, ইসলামের
একটি গুরুত্বপূর্ণ বুনিয়াদী ফরযের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
অনুধাবনে চরমভাবে ব্যর্থ হবে | যার কারণে যে কেউ
যেকোন স্থানকে হজ্বের জন্যে নির্ধারন করে নিবে |
যেমন সুরেশ্বর ভন্ডদের আস্তানায় কৃত্রিম কা’বা
শরীফ নির্মাণ করা হয়েছে এবং তাতে হাজরে
আসওয়াদও স্থাপন করা হয়েছে | তাদের বক্তব্য হলো-
হজ্ব করার জন্যে মক্কা শরীফে যাওয়ার কোন
প্রয়োজন নেই বরং এখানে হজ্ব করলেই হজ্বের সওয়াব
পাওয়া যাবে | (নাউযুবিল্লাহ)
কাজেই নতুন করে কোন আমলকে হজ্ব হিসাবে সাব্যস্ত
করা বা কোন আমলের জন্যে হজ্বের সওয়াব নির্ধারণ
করা অথবা নফলকে ফরয বলা হারাম, নাজায়েয ও
কুফরী | (সমূহ আক্বায়েদের কিতাব)
অতএব, ইসলামের জন্যে ক্ষতিকর এরূপ কোন বক্তব্য
পেশ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয |